রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রাইভেটকারে ধর্ষণের শিকার সেই তরুণী সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। ওই তরুণী জানান, তার মুখে রুমাল বেঁধে গাড়িতে তুলে ধর্ষণ করেছিল রনি। এ সময় রনির মুখে ছিল মদের গন্ধ। অশালীন ভাষা ব্যবহার করে তরুণীকে গালি দিয়েছিল সে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদকে বুঁদ হয়ে থাকা রনির স্বভাব। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার কথা বলে প্রায়ই রাতে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যেত। বাসায় ফিরতো গভীর রাতে, কখনও কখনও ভোরে। ব্যবসা ও রাজনীতি করার কারণে এসব বিষয়ে সন্দেহ করতেন না তার স্ত্রী। স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় প্রভাব খাটাতেন বিভিন্নক্ষেত্রে। রাত-বিরাতে নানা স্থানে আড্ডাবাজি, গাড়িতে বসে বিয়ার ও মদ পান করলেও আগে কখনও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে হয়নি তাকে। ধানমন্ডি মিতালী রোড এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাসায় বন্ধুদের নিয়ে প্রায়ই আড্ডা বসাতো রনি। স্থানীয় কয়েক নেতা ও তার ব্যবসায়ী বন্ধুরা অংশ নিতো ওই আড্ডায়। সেখানে কলগার্লরাও থাকতো। ঘটনার কিছুদিন আগে থেকেই ধানমন্ডির ওই বাসার মালিক আড্ডা বন্ধ করে দেন। তারপর প্রায়ই রাতে গাড়িতে করে বাইরে চলে যেতো রনি।
এদিকে এই মামলায় তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে রনিকে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে রনি। গত ১০ই জুন রাতে ধর্ষণের অভিযোগে তাকে গণপিটুনি দিয়ে জনতা পুলিশে সোপর্দ করার পর প্রকাশ পাচ্ছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রনি জানিয়েছে, সংসদ ভবনের সামনে থেকে টাকার বিনিময়ে দুই নারীকে প্রাইভেটকারে তোলা হয়। কিছুদূর গিয়ে একজনকে নামিয়ে দিতে গেলে তিনি চিৎকার করতে থাকেন। তখন ওই এলাকায় যানজট ছিল। পরে আশপাশের লোকজন না বুঝে তাকে ও তার চালককে গণধোলাই দিয়েছে। তার বাবা আইনজীবী এবং বড় ব্যবসায়ী। রনির বড় ভাই ব্যারিস্টার। স্থানীয় জনতা এবং ভিডিও ফুটেজ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর কলেজগেট সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেটকারের (ঢাকা মেট্রো-গ ২৯-৫৪১৪) ভিতরে এক তরুণীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছিলেন রনি। ওই সময় আরেকটি গাড়িতে ছিলেন রাফি নামে এক যুবক। তিনি মনে করছিলেন গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা চলছে। এরপর রাফিসহ সেখানে থাকা আরও কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে রনির প্রাইভেটকারটি আটকে ফেলেন। তখন তারা দেখতে পান গাড়ির পেছনের আসনে রনি এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করছে। পরে জনতা গাড়ির ভিতর থেকে এক তরুণী, রনি ও তার গাড়ি চালককে বের করে আনেন।
এর আগে রাজধানীর কলেজ গেট এলাকায় প্রাইভেট কারে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হক রনিকে গতকাল তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আহসান হাবিব উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে রনি ওই রাতের পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে।
পুলিশকে রনি জানিয়েছে, মেয়ে দু’টিকে গাড়িতে তুলে নেয়ার সময় মাদকের নেশায় বুঁদ হয়েছিলো সে। রনি স্বীকার করেছে, প্রায় রাতেই গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভে বের হয় সে। কখনও কখনও তার দুই-এক বন্ধু সঙ্গী হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরে বাংলানগর থানার উপ-পরিদর্শক মিনহাজ উদ্দীন ধর্ষণের মামলার তদন্তের জন্য মাহমুদুল হক রনির সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে তাকে আদালতে হাজির করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. যোনাইদ উল্লাহ শোয়েব রনির জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।